ঘামের দুর্গন্ধ এমন একটি কমন সমস্যা, যা নারী-পুরুষ নির্বিশেষে অনেকের জীবনেই অস্বস্থির কারণ হয়ে দাড়ায়। এটি কেবল একটি শারীরিক অস্বস্থিই নয়, অনেক সময় আত্নবিশ্বাসেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। গ্রীষ্মকালে আরও প্রকট আকার ধারন করে এই সমস্যাটি। বাজারে বিভিন্ন ধরণের ডিওডোরেন্ট ও অ্যান্টিপার্সপির্যান্ট পাওয়া গেলেও, অনেকেই প্রাকৃতিক উপায়ে এর সমাধান খুঁজেন। কারণ প্রাকৃতিক উপায় বা ঘরোয়া পদ্ধতিগুলো নিরাপদ এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ামুক্ত, যা দীর্ঘমেয়াদী সুফল বয়ে আনতে পারে।
আজকের ব্লগে আপনাদের জানাবো ঘামের দুর্গন্ধ দূর করার কিছু ঘরোয়া উপায়। তবে এর আগে জানতে হবে ঘামের দুর্গন্ধ আসলে কেন হয়।
- ঘামের দুর্গন্ধ হওয়ার কারণ
অ্যাক্রাইন, অ্যাপোক্রিন ও সিবেশাস- এই তিনটি গ্রন্থির জন্য শরীরে ঘাম উৎপন্ন হয়। মজার বিষয় হলো, ঘামের নিজের কিন্তু কোন দুর্গন্ধ নেই। আমাদের শরীরের বিভিন্ন ব্যাক্টেরিয়ার সাথে মিশে ঘাম দূর্গন্ধযুক্ত গ্যাস সৃষ্টি করে। শরীরের বিভিন্ন অংশে, বিশেষ করে আন্ডারআর্ম, গ্রোইন (কুঁচকি), এবং পায়ের তলায় যেখানে ঘাম জমে এবং বাতাস চলাচল কম হয়, সেখানে বেশি পরিমাণে আনহেলদি ব্যাকটেরিয়া প্রডিউস হয়। তাই দুর্গন্ধও তীব্র হয়। হরমোনের পরিবর্তন, খাদ্যাভ্যাস, মানসিক চাপ এবং কিছু ঔষধও ঘামের দুর্গন্ধের কারণ হতে পারে।
- ঘরোয়া উপায়ে ঘামের দুর্গন্ধ দূর করার কার্যকরী টিপস
ঘামের দুর্গন্ধ দূর করতে সহজলভ্য কিছু প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করে দারুণ ফল পাওয়া যায়। নিচে কিছু কার্যকর ঘরোয়া উপায় তুলে ধরা হলো:
১। আপেল সাইডার ভিনেগার
আপেল সাইডার ভিনেগার একটি শক্তিশালী অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এজেন্ট, যা ঘামের দুর্গন্ধ দূর করতে অনেক বেশি কার্যকর। এটি ত্বকের pH ব্যালেন্স বজায় রাখতেও হেল্প করে।
তুলায় কিছুটা আপেল সাইডার ভিনেগার নিয়ে সরাসরি আন্ডারআর্মে লাগান। ১৫-২০ মিনিট রেখে শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলুন। প্রতিদিন একবার এটি ব্যবহার করতে পারেন। তবে যাদের ত্বক সেনসিটিভ, তাদের ভিনেগারের সঙ্গে সমপরিমাণ পানি মিশিয়ে ব্যবহার করতে হবে।
২। লেবুর রস
লেবুতে থাকে সাইট্রিক অ্যাসিড, যা আনহেলদি ব্যাকটেরিয়াগুলোকে ধ্বংস করতে সাহায্য করে এবং প্রাকৃতিক ব্লিচিং এজেন্ট হিসেবে কাজ করে।
একটি তাজা লেবু অর্ধেক করে কেটে আন্ডারআর্মে আলতোভাবে ঘষুন। শুঁকিয়ে গেলে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। লেবুর রস ব্যবহারের পর সরাসরি সূর্যের আলোতে যাবেন না, কারণ এতে ত্বকে কালচে দাগ হতে পারে। সেনসিটিভ ত্বকে ব্যবহার না করাই ভালো।
৩। টি ট্রি অয়েল
টি ট্রি অয়েল একটি শক্তিশালী অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান, যা ঘামের দুর্গন্ধ দূর করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
৫-১০ ফোঁটা টি ট্রি অয়েল ৫০ মিলি.লিটার পানিতে মিশিয়ে একটি স্প্রে বোতলে ভরে নিন। এটি প্রতিদিন ডিওডোরেন্টের মতো ব্যবহার করতে পারেন। টি ট্রি অয়েল সরাসরি ত্বকে ব্যবহার করা ঠিক নয়, কারণ এটি এসেন্সিয়াল অয়েল এবং অনেক বেশি পাওয়ারফুল।
৪। গোলাপ জল বা রোজ ওয়াটার
গোলাপ জল শুধু সুগন্ধিই নয়, এটি ত্বকের pH ব্যালেন্স বজায় রেখে আনহেলদি ব্যাকটেরিয়ার প্রডিউস কমাতে সাহায্য করে। গোসলের পর আন্ডারআর্মে সরাসরি গোলাপ জল স্প্রে করুন বা তুলোর সাহায্যে লাগান। এটি সতেজ অনুভূতি দেবে এবং দুর্গন্ধ কমাবে।
৫। ফিটকিরি
যুগ যুগ ধরে দুর্গন্ধ দূর করতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে ফিটকিরি। এটি একটি প্রাকৃতিক অ্যান্টিসেপটিক এবং অ্যাস্ট্রিনজেন্ট হিসেবে কাজ করে। এটি ঘাম কমাতে এবং ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধিতে ব্যারিয়ার হিসেবে কাজ করে। একটি ফিটকিরির টুকরা পানিতে ভিজিয়ে গোসলের পর আন্ডারআর্মে আলতো করে ঘষুন। শুঁকিয়ে গেলে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। অথবা ফিটকিরি গুঁড়ো করে পানিতে মিশিয়ে দূর্গন্ধযুক্ত এরিয়ায় স্প্রে করুন।
৬। কমফোরটেবল পোশাক সিলেকশন
পোশাকের ধরনও ঘামের দুর্গন্ধের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সিনথেটিক কাপড়ের পরিবর্তে সুতির মতো নরম ম্যাটেরিয়ালের পোশাক পরুন। এধরনের পোশাক পরলে সহজে বাতাস চলাচল করতে পারে এবং শরীরের ঘাম তাড়াতাড়ি শুঁকিয়ে যায়। ফলে ব্যাকটেরিয়ার প্রোডাকশন কমে। টাইট পোশাকের পরিবর্তে ঢিলেঢালা পোশাক পরুন, যা শরীরের বিভিন্ন অংশে ভ্যান্টিলেশন বা বাতাস চলাচল বাড়াবে।
৭। খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন
কিছু খাবার শরীরের দুর্গন্ধ বাড়াতে পারে। যেমন; অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার, রসুন, পেঁয়াজ ইত্যাদি। এধরনের খাবার খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দেয়ার চেষ্টা করুন। সেই সাথে পান করুন পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি। পানি আমাদের শরীরকে ডিটক্সিফাই করতে সাহায্য করে এবং ঘামের দুর্গন্ধ কমায়। খাদ্যতালিকায় রাখুন সবুজ শাকসবজি এবং সিজনাল ফলমূল ।
- কখন ডাক্তারের কাছে যাবেন
যদি ঘরোয়া উপায় অবলম্বন করার পরও ঘামের দুর্গন্ধের সমস্যা থেকে রেহাই না পান, তাহলে অবশ্যই একজন ভালো চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। কারণ কিছু ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ঘাম হওয়া বা ঘামে দুর্গন্ধ, আপনার ভেতরের কোন স্বাস্থ্য সমস্যার লক্ষণ হতে পারে।
ঘামের দুর্গন্ধের বিষয়টি অত্যন্ত বিব্রতকর। তবে সঠিক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, জীবনযাত্রার পরিবর্তন এবং কিছু কার্যকর ঘরোয়া উপায় অবলম্বনের মাধ্যমে এটি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
রোজ ওয়াটারসহ স্কিন কেয়ারের অথেনটিক সব প্রোডাক্ট পেতে ভিজিট করুন mylavino.com এ। অথবা অর্ডার করুন ফেসবুক পেজ Lavino থেকে।
লিখেছেন আফরোজ জান্নাত হৃদিতা